শ্বশুর বাড়ির ইফতারি খাওয়া, দেওয়া ও নেওয়া কী ?
সুন্নাত নাকি গুনাহ ? সংস্কৃতি নাকি অপসংস্কৃতি ?
সামাজিক প্রথা নাকী কু প্রথা ?
নাকি কু রুসুম ,সামাজিক অভিশাপ, সামাজিক ব্যাধি?
আমরা জানি ইফতারি খাওয়া এবং খাওয়ানো সুন্নাত নেকির কাজ, যদি কেউ শার্তহীনভাবে খান বা খাওয়ান। কিন্তু যদি কেউ কোনো কারণবশত প্রত্যক্ষ্য অতবা পরোক্ষ্যভাবে (লোক লজ্জায়) বাধ্য হয়ে ,চাপে পরে আপনাকে মিষ্টি জিলাপি খাওয়ায় তা কখনো হালাল হবে না।
রাসুল (স) ইরশাদ করেন , ” কোনো মুসলমানের সম্পদ তার আন্তরিক সম্মতি ব্যাতীত হস্তগত করলে তা হালাল হবে না ‘ ( বায়হাকিঃ খণ্ড ৮ পৃষ্টা ৩১৬ , হাদিসঃ ১৬৭৫৬ )
বরং কারো থেকে প্রত্ত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ্যভাবে জোরপূর্বক কিছু গ্রহন করা জুলুম। গ্রহণকারী জালিম হিসেবে গন্য হইবে।
আমাদের সমাজে মেয়ের বাবার পক্ষ থেকে, মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে সৃজনভিত্তিক, বিভিন্ন ফলের মৌসুমে সব ধরনের ফল, বিশেষ করে রমজান মাসে মিষ্টি, জিলাপি মেয়ের শ্বশুরবাড়ির পরিবারবর্গ এবং আত্বীয়-সজনসহ সবার জন্য নিয়ে যেতে হয় । সমাজের মানুষ এটাকে রিতি রেওয়াজ , প্রথা ,সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য মনে করেন । একজন বাবা তার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় সর্বাত্তক চেষ্টা করেন যাতে একটা ভালো ছেলের কাছে মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেন । কিন্তু ছেলে পক্ষ্য বিয়ের সময় সামাজিকতার নাম করে বিভিন্ন নামে যেমন পার্নিচার,ফ্রীজ, লেপ তুষক, রান্না ঘরের আসবাব পত্র, বিভিন্ন উপায়ে যৌতুক আদায় করে । এখানেই শেষ নয় বিয়ের পরে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির সবার জন্য কাপড় কিনে দিতে হয় । এর পর শুরু হয় সৃজনভিত্তক মৌসুমি ফল ,রমজান মাসে মিষ্টি জিলাপি । এসব দিতে যদি দেরি হয় অথবা মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের চাহিদামতো না হয় ,তখন মেয়ের উপর শারিরিক এবং মানসিক নির্যাতন শুরু হয় ,তালাক এবং আত্ত্বহত্যার মতো ঘটনাও ঘটতেছে অহরহ ।
তবে এই মৌসুমি ফল আর মিষ্টি জিলাপির জন্য কেনো এতো অত্যাচার আর অবিচার। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কী একদিন মিষ্টি জিলাপি কিনে খাওয়ার মতো তৌফিক নাই অবশ্যই আছে । আসল সমস্যা হচ্ছে আমাদের সমাজের মানুষ এটাকে সামাজিকতা মনে করে ।
যৌতুক এবং শ্বশুর বাড়ির ইফতারি নামক অপসংস্কৃতি এই কু প্রথা প্রচলনে আমরা নিজেরাই দায়ী। কার শ্বশুরবাড়ি থেকে কী পরিমান আম কাঠালি , মিষ্টি জিলাপি, (ইফতারি নামক ডিজিটাল যৌতুক) এলো এ নিয়ে আমাদের সমাজে খুব বেশি অহংকার করা হয় । ফলে শ্বশুরালয়ের লোকদের মধ্যে এমন চিন্তা কাজ করে যে সবার বাড়িতে উপহার এলো , আমার বাড়িতে এলো না , আমি গরিবের সঙ্গে আত্বীয়তা করলাম ?
আর যদি শ্বশুরবাড়ির ইফতারি না আসে, আশে পাশের মানুষ, আত্বীয় সজন নানা কথাবার্তা বলে ,যে ছেলেটা এমন জায়গায় বিয়ে করলো শ্বশুর বাড়ির লোকজনের মাঝে সামাজিকতা নাই । রিতি রেওয়াজ চিনে না এরকম আরো কতো কিছু । মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে সময় মতো চাহিদামতো ইফতারি না দেওয়া, অর্থাৎ জামাই এবং মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে অসম্মমান করা । আমাদের সমাজের মানুষ এটাই মনে করে ।
এমন হীন মানসিকতাই আমাদের সবাইকে এই নোংরা ‘ ভিক্ষা (শ্বশুর ইফতার ও যৌতুক) নিতে বাধ্য করে।
অথচ হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে , ‘ওপরের (দাতার)হাত নিচের (গ্রহীতার) হাত থেকে শ্রেষ্ট। ‘ (বুখারি , হাদিসঃ ৬৪৪১)।
একজন গরিব বাবা তার মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে এই ইফতারি না দেওয়ার কারনে মেয়ের উপর যে অত্যাচার, অভিচার শারিরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয় । আত্বহত্যার মতো ঘটনাও ঘটে । এর জন্য শুধু মাত্র একটা পরিবার (মেয়ের শশুড়বাড়ির লোকজন) দায়ী নয় বরং আমাদের সমাজের ঐ সকল মানুষ দায়ী (জিম্মাদার, অপরাধি) যারা এই কু প্রথাকে ( শশুড় বাড়ির ইফতারিকে) কে প্রত্যক্ষ্য অথবা পরোক্ষভাবে সমর্তন করেন ।
কিছু মানুষ এও বলেন আমরা তো আর আমাদের ইফতারি খাওয়াতে বলিনি। কেউ আমাদের ইচ্ছে করে নিজে থেকে খুশি হয়ে খাওয়ালে দোষের কী ?
এই লোক গুলো এমনভাবে কথা বলে, যদি মেয়ের বাবা ফোন করে বলে , বেয়াই মশাই রমজান মাসের এতো তারিখে আমরা ইফতারি নিয়ে আসিতেছি । কী পরিমান নিয়ে আসবো বলে দিলে ভালো হয় । কারণ আপনার আত্বীয়সজন কী পরিমান দাওয়াত দিবেন আমার তো জানা নেই । তখন ভালো মানুষের ভাব দেখিয়ে এমন ভাবে কথা বলে যে , উনার মতো ভালো মানুষ সমাজে আর দৃতীয় কেউ হতেই পারে না । বলে শ্বশুর মশাই এসবের কী দরকার । ইফতারি আমাদের লাগবে না । তবে আপনার ইচ্ছা, খুশিমতো যা হয় । আমাদের কোনো চাহিদা নেই । এরকম কথা বলার পরেও , এমনও দেখা যায় মেয়ের বাবা সর্বাত্তক চেষ্টা করেও নিজের ক্ষমতার বাহিরে গিয়ে, টাকা ধার করে মেয়ের শ্বশুর বাড়ি ইফতারি নিয়ে গেছেন । তারপরেও গরিব বাবার মেয়েকে কটু কথা শুনতে হয় ।
মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন বলে ,
এতো অল্প পরিমাণ মিষ্টি জিলাপি নিয়ে আসলো, আমাদের পারা প্রতিবেশী আত্বীয়সজন কাউকে ভালো মতো খাওয়াতে পারলাম না । মিষ্টির কোয়ালিটি ভালো না , তা ও আবার মাসের প্রথম তারিখে নিয়ে আসি নি । আরো নানা ধরনের কটু কথা বলে, মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
আর যদি কোনো কারণ বশত মেয়ের বাবা সময়মতো মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ইফতারি পাঠাতে না পারেন । তাহলে মেয়ের উপর নেমে আসে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন।
তবে কিছু টাকা ওয়ালা লোক আছেন, যারা বলে থাকেন, আমি আমার মেয়ের বাড়িতে খুশি হয়ে মিষ্টি, জিলাপি, আম, কাঠালি (ইফতারি) পাঠালে তাতে দোষের কী ? ঠিক আছে মেনে নিলাম আপনি খুশি হয়ে , নিজে থেকে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ডাক ঢোল বাজিয়ে ইফতারি দিলেন । কিন্তু আপনার ইফতারির এই আয়োজন দেখে। হয়তোবা গরিব বাবার কোনো মেয়েকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বা কটুকথা শুনাতে আরো উৎসাহি হচ্ছে । যে অমুকের মেয়ের বাবা এতো কিছু ইফতারি নিয়ে এসেছে , তার মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে । আর আমরা এমন এক ফকিন্নির মেয়ের সাথে , ছেলের বিয়ে দিলাম । মেয়ের বাবা রিতি রেওয়াজ জানে না ,সামাজিকতা চিনে না । পুরো সিজনে একবার মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ইফতারি দেওয়ার মতো টকা পয়সা নাই, এমন ফকিন্নিদের সাথে সম্পর্ক করলাম । আরো কত ধরণের শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয় ।
মেয়ের/বোনের মুখ রক্ষার্থে সামাজিক এই কুপ্রথার ভার অনেক পরিবার অনায়েশে বয়ে যাচ্ছে। কোনরূপ আনন্দ ছাড়াই মেয়েপক্ষ বলিদান হয়ে যাচ্ছে। সবচাইতে বেশী নির্মমতার স্বীকার সমাজের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবার। দরিদ্র পরিবার মেয়ের সুখের জন্য সুদে টাকা এনে হলেও মেয়ের বাড়ি ইফতারি দিতে বাধ্য হয়। শ্বশুরবাড়ির লোকজন যখন ইফতারি খাওয়া আর বিতরণে ব্যস্ত, হয়তো সেই রাতে একটা মেয়ের বাবা চোখেরজলে বালিশ ভিজাচ্ছে। কিভাবে সে টাকা পরিশোধ করবে। সেই টাকার চিন্তা শেষ হতে না হতেই দেখা যায় আরেকটা আম-কাঠালী দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। উফ, কি নির্মমতা!
এতে সম্পর্ক ভালো হচ্ছে না। বরং এই দেওয়ার অন্তরালে লুকিয়ে থাকে হাজার হাজার অশ্রু আর মেয়ের জামাই বাড়ির প্রতি নীরব ঘৃণা জন্মাচ্ছে প্রতিনিয়ত। যা মুখ ফুটে বলা হচ্ছে না
আবার দেখা যায় ,
কনের বাবাও মেয়ের বাড়িতে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিভিন্ন অহেতুক বাড়তি জিনিসপত্র দিয়ে সমাজের অন্যদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। মেয়েকে সন্তুষ্টচিত্তে কিছু দিতে চাইলে এমনভাবে দেওয়া উচিত, যাতে অন্যরা এই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়। কারণ বেশির ভাগ মানুষই লোকলজ্জার ভয়ে পড়ে নিজের সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও এই নোংরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ।
আপনার এই লোক দেখানো ইফতারির আয়োজন , যদি অন্যের কষ্টের কারণ হয়ে যায় ,তবে তা করা কখনো ঠিক হবে না ।
আপনি খুশি হয়ে আপনার মেয়েকে দেন, খাওয়ান । কিন্তু মেয়ের শ্বশুর বাড়ির আত্বীয়সজন পারা প্রতিবেশী সহ সবার জন্য ডাক ঢোল বাজিয়ে কেনো ইফতারি নিয়ে যেতে হবে ? হ্যা এখন বলবেন যাতে আমার মেয়েকে তার শ্বশুরালয়ের লোকজন খুশি রাখে । আপনার মেয়েকে খুশি রাখা মেয়ের স্বামীর ইমানি দায়ীত্ব । বিয়ের পর স্বামীর জন্য অত্যাবশ্যক স্ত্রীর যাবতীয় ভরণ পোষন দেওয়া, স্ত্রীর খেয়াল রাখা, সুখে শান্তিতে রাখা, স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যাবহার করা ।
কেননা আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন ,
সুরা নিসা আয়াত ১৯ یایها الذین امنوا لا یحل لکم ان ترثوا النساء کرها و لا تعضلوهن لتذهبوا ببعض ما اتیتموهن الا ان یاتین بفاحشۃ مبینۃ ۚ و عاشروهن بالمعروف ۚ فان کرهتموهن فعسی ان تکرهوا شیئا و یجعل الله فیه خیرا کثیرا ﴿۱۹﴾
হে মুমিনগণ, তোমাদের জন্য হালাল নয় যে, তোমরা জোর করে নারীদের ওয়ারিছ হবে। আর তোমরা তাদেরকে আবদ্ধ করে রেখো না, তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে তোমরা কিছু নিয়ে নেয়ার জন্য, তবে যদি তারা প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন। আল-বায়ান
হে ঈমানদারগণ! জোরপূর্বক নারীদের ওয়ারিশ হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয় আর তাদেরকে দেয়া মাল হতে কিছু উসূল করে নেয়ার উদ্দেশ্যে তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করবে না, যদি না তারা সুস্পষ্ট ব্যভিচার করে। তাদের সাথে দয়া ও সততার সঙ্গে জীবন যাপন কর, যদি তাদেরকে না-পছন্দ কর, তবে হতে পারে যে তোমরা যাকে না-পছন্দ করছ, বস্তুতঃ তারই মধ্যে আল্লাহ বহু কল্যাণ দিয়ে রেখেছেন। তাইসিরুল
ইচ্ছাকৃত এই কু প্রথা পালন করা মোটেও ঠিক নয়।
উদাহরণ স্বরপ মনে করেন কোনো সরকারি অফিসে কোনো এক অফিসারের কাছে আপনার কোনো কাজের আবেদনের কাগজ জমা দিলেন । আর পরে আপনি নিজে থেকে খুশি হয়ে, এই অফিসের সবার জন্য উপহার হিসেবে মিষ্টি জিলাপি নিয়ে গেলেন , যাতে আপনার কাজটা সময়মতো সঠিকভাবে হয়ে যায় । কিন্তু একজন সরকারি কর্মকর্তার কর্তব্য, দায়ীত্ব হচ্ছে সময়মতো সঠিক কাজ করা, তার দায়ীত্ব পালন করা । সময়মতো সঠিক কাজ করার জন্য আপনার উপহার ,উপহার নয় সম্পূর্নরুপে ঘুষ ।
তেমনি স্ত্রীকে সুখে রাখা, খুশি রাখা স্বামীর ইমানি দায়ীত্ব , কর্তব্য । আর আপনি নিজে থেকেও যখন এই ভেবে যে, যাতে তার স্বামী আপনার মেয়েকে খুশি রাখে, এই জন্য মেয়ের স্বামীকে অথবা মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে মিষ্টি জিলাপি খাওয়ালেন । তা সম্পূর্ন রুপে ঘুষ হিসেবে পরিগনিত হইবে । এবং যৌতুক হিসেবে গন্য হবে।
কিছু মানুষ শ্বশুর বাড়ির ইফতারি কে সংস্কৃতি,রিতি রেওয়াজ ভাবেন ।
মনে রাখতে হবে,
বিষের বোতলে মধুর লেবেল লাগিয়ে দিলে বিষ কখনো মধুতে পরিণত হবে না। আর আম কাঠালি,মিষ্টি জিলাপি, শ্বশুর বাড়ির ইফতারি,কখনও উপহার বা সামাজিকতা, প্রথা, সংসস্কৃতি, ঐতিহ্য হতে পারে না, বরং তা যৌতুক । দন্ডনীয় অপরাধ।
যৌতুক প্রথার প্রচলন কোথা থেকে কিভাবে শুরু হয়েছিলো ?
তদানীন্তন হিন্দু সমাজে কণ্যাকে দশ/বার বছরের মধ্যে পাত্রস্থ বা বিয়ে দিতে না পারলে পুরুষ নরকবাসী হবেন বলে ভয় দেখানো হতো। এমন কি সমাজ চ্যূত করার বিধিও ছিল। হিন্দু সমাজে পিতা ও ভাতার সম্পদে কণের অধিকার নেই বিধায় সনাতন বা হিন্দু ধর্মের বিধি বিধান থেকেই যৌতুক প্রথার প্রচলন হয়ে পড়ে।
যৌতুক বলতে কী বুঝায়।
বাবা : আমরাতো যৌতুক বলতে শুধু মেয়ে পক্ষের কাছ থেকে ছেলে পক্ষ যা দাবী- দাওয়ার মাধ্যমে আদায় করে নেয় তাকেই বুঝি। উকিল সাহেব আইনেও কি যৌতুক বলতে এটাই বুঝায়?
উকিল : সাধারণ অর্থে ‘যৌতুক’ বলতে বিয়ের সময় মেয়ে পক্ষের কাছ থেকে ছেলে পক্ষের দাবী- দাওয়া আদায়কে বুঝালেও, আইনে বিয়ের শর্ত হিসেবে বর বা কনে যে কোন পক্ষের দাবী-দাওয়াকে যৌতুক বলে। ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন অনুসারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যদি কোন পক্ষ অপর পক্ষকে বিয়ের আগে-পরে-চলাকালীন যে কোন সময় যে কোন সম্পদ বা মূল্যবান জামানত হস্তান্তর করে বা করতে সম্মত হয় সেটাই যৌতুক বলে বিবেচ্য হবে। ব্যাখ্যা : ১
বাবা : বিয়েতে উপহার দিলে তাও কি যৌতুক হবে?
উকিল : সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের উপহার যৌতুক হিসেবে গণ্য হবে না। তবে এখানে শর্ত হচ্ছে যে এই উপহার অবশ্যই বিয়ের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয় এমন কেউ প্রদান করতে হবে এবং বিয়ের পণ (যৌতুক) হিসেবে প্রদান করতে পারবেন না, উপহার হিসেবে দিতে হবে। অর্থাৎ বিয়ের শর্ত হিসেবে ৫০০ টাকার সমমূল্যের কোন কিছুও দেয়া যাবে না, দিলে তা আইন অনুসারে যৌতুক হবে এবং অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ অনুসারে বিবাহ স্থির থাকার শর্তে বা বিবাহের পণ হিসেবে প্রদত্ত বা প্রদানে সম্মত অর্থ, যে কোন সামগ্রী বা অন্যবিধ সম্পদকে যৌতুক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (collected chandpur.gov.bd)
* যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮
( ২০১৮ সনের ৩৯ নং আইন )
যদি বিবাহের কোনো এক পক্ষ, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, বিবাহের অন্য কোনো পক্ষের নিকট কোনো যৌতুক দাবি করেন, তাহা হইলে উহা হইবে এই আইনের অধীন একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কিন্তু অন্যূন ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন। সুত্র (collected laws of Bangladesh)
যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮–এর ৩ ও ৪ ধারায় বলা আছে, যৌতুক দাবি, প্রদান ও গ্রহণ করার দণ্ড হচ্ছে অনধিক ৫ বছর এবং অন্যূন ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। আইনে আরও বলা আছে, যে ব্যক্তি যৌতুক দেওয়া বা গ্রহণ করার ব্যাপারে কোনো ধরনের সাহায্য বা সহায়তা করবেন, তিনিও একই দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। (collected laws of Bangladesh)