সারোগেসি বলতে কি বুঝায়?

What is surrogacy সারোগেসি অর্থ কি

সারোগেসি বলতে কি বুজঝায়, সারোগেসি এমন কিছু যা অন্য কিছুর পরিবরর্তে প্রতিস্থাপন করা হয়। অথবা কেউ বা এমন কিছু যা প্রতিস্থাপন করে অন্য কেউ বা অন্য কিছুর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। সহজভাবে সারোগেসি (surrogacy) বলতে বুঝায় গর্ভ ভাড়া দেওয়া । সারোগেসি একটি আধুনিক প্রজনন ব্যবস্থা।( সুত্র wikipedia)

সারোগেসি একটি বিকল্প মাতৃত্ব

সারোগেসি (Surrogacy) বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মাতৃত্বের একটি বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে একজন নারী (সারোগেট মা) অন্য একজন বা একাধিক ব্যক্তির সন্তানের গর্ভধারণ এবং প্রসব করেন। এই প্রক্রিয়া বিভিন্ন কারণেই গ্রহণ করা হয়, যেমন বন্ধ্যাত্ব, চিকিৎসাগত সমস্যাগুলি বা সিঙ্গেল প্যারেন্ট বা সমকামী দম্পতিদের সন্তানের আকাঙ্ক্ষা পুরন করতে।

সারোগেট মাদার ( surrogate mother)

একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের এই পদ্ধতিকে সারোগেসি বলে। এক্ষেত্রে গর্ভধারণের কাজটি যে নারী করে থাকেন তাকে (surrogate mother) সারোগেট মাদার অর্থাৎ সৎ মা বা সারোগেট মা বলা হয়। কিন্তু সারোগেসির মধ্যেও অনেক প্রকারভেদ রয়েছে।

সারোগেসির প্রকারভেদ

সারোগেসির দুটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে:

  1. প্রথাগত সারোগেসি: প্রথাগত সারোগেসিতে সারোগেট মা নিজের ডিম্বাণু ব্যবহার করে গর্ভধারণ করেন। এখানে সারোগেট মা এবং শিশুর জিনগত সম্পর্ক থাকে। এই প্রক্রিয়ায় কৃত্রিম গর্ভধারন (IUI) বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) ব্যবহৃত হতে পারে।
  2. গেস্টেশনাল সারোগেসি: গেস্টেশনাল সারোগেসিতে সারোগেট মা কেবল গর্ভধারণ করেন, কিন্তু শিশুর জিনগত কোনো সম্পর্ক নেই। এখানে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু দাতা বা ভবিষ্যৎ বাবা-মায়ের থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং IVF পদ্ধতিতে সারোগেট মায়ের গর্ভে স্থাপন করা হয়।

সারোগেসির প্রক্রিয়া

সারোগেসির প্রক্রিয়া বেশ কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়:

  1. সারোগেট মা নির্বাচন: সারোগেট মা হিসেবে কে কাজ করবেন তা নির্বাচন করা হয়। এটি বন্ধু, আত্মীয় বা পেশাদার সারোগেট নারী হতে পারে।
  2. চুক্তি: আইনি চুক্তি করা হয় যেখানে সারোগেট মা এবং ইচ্ছুক বাবা-মা তাদের দায়িত্ব এবং অধিকারগুলো সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেন।
  3. চিকিৎসা পরীক্ষা: সারোগেট মা এবং ইচ্ছুক বাবা-মা উভয়ই বিভিন্ন চিকিৎসা এবং পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যান। যাতে তারা এই প্রক্রিয়ার জন্য উপযুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করা যায়।
  4. IVF বা IUI: গেস্টেশনাল সারোগেসির ক্ষেত্রে IVF এবং প্রথাগত সারোগেসির ক্ষেত্রে IUI প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
  5. গর্ভধারণ এবং প্রসব: সারোগেট মা গর্ভধারণ করেন এবং শিশুর জন্ম দেন।

আইনি ও নৈতিক দিক

সারোগেসি নিয়ে বিভিন্ন দেশের আইন ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। কিছু দেশে সারোগেসি বৈধ এবং সুসংহত নিয়মের মধ্যে সম্পন্ন হয়, আবার কিছু দেশে এটি নিষিদ্ধ। সারোগেসি চুক্তি সম্পন্ন করার সময় আইনি পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সারোগেসির সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ

সুবিধা:

  • অসাধারণ বিকল্প: যারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম, তাদের জন্য এটি একটি অসাধারণ বিকল্প।
  • জিনগত সম্পর্ক: গেস্টেশনাল সারোগেসির মাধ্যমে বাবা-মা তাদের নিজস্ব জিনগত সন্তান পেতে পারেন।

চ্যালেঞ্জ

  • খরচ: সারোগেসির প্রক্রিয়া অনেক ব্যয়বহুল হতে পারে।
  • আইনি জটিলতা: সারোগেসি নিয়ে বিভিন্ন আইনি জটিলতা থাকতে পারে।
  • মানসিক চাপ: উভয় পক্ষের জন্য মানসিক চাপ ও উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

সারোগেসি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

ইসলামে কোনটি জায়েজ এবং কোনটি অবৈধ:
ইসলামী আইন অনুযায়ী, একজন ওয়েট-নার্স বা একজন মহিলা যিনি তার সাথে সম্পর্কিত নয় এমন একটি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, তাকে দ্বিতীয় মা হিসেবে গণ্য করা হয়। এখনো মুসলিম দেশগুলোতে সারোগেসি নিয়ে কোনো মতামত তৈরি হয়নি। মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগের সাথে অধিভুক্ত ইসলামিক ফিকহ কাউন্সিল পাঁচ ধরনের আইভিএফকে সম্পূর্ণরূপে অবৈধ ঘোষণা করেছে এবং মাত্র দুটিকে ইসলামী আইনে অনুমোদিত বলে ঘোষণা করেছে।

অবৈধ IVF – স্বামীর শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্তকরণ এবং তার স্ত্রী ব্যতীত অন্য একজন মহিলার ডিম্বাণু। তার স্বামীর ব্যতীত অন্য পুরুষের শুক্রাণু দ্বারা একজন মহিলার ডিম্বাণু নিষিক্তকরণ। স্বামীর শুক্রাণু এবং স্ত্রীর ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণ, যেখানে সারোগেট মায়ের জরায়ুতে ভ্রূণ স্থাপন করা হয়। সন্তান ধারণের চেষ্টাকারী দম্পতি ব্যতীত অন্য দু’জনের শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু দ্বারা নিষিক্তকরণ।

দুই ধরনের আইনি IVF পদ্ধতি নিম্নরূপ: শরীরের বাইরে স্বামীর শুক্রাণু এবং স্ত্রীর ডিম্বাণু ব্যবহার করে প্রাপ্ত, যেখানে ভ্রূণ স্ত্রীর জরায়ুতে রোপন করা হয়। যখন স্বামীর শুক্রাণু যান্ত্রিকভাবে তার স্ত্রীর জরায়ুতে ঢোকানো হয়, তার দেহের ভিতরে নিষিক্তকরণের অনুমতি দেয়।

সারোগেসি সম্পর্কে ইসলামে অনেক ধারণা
রয়েছে। সুন্নি মুসলিম পণ্ডিতরা বলেছেন যে ইসলামে সারোগেসি অনুমোদিত নয়, কারণ এটি একটি শিশুকে গর্ভধারণের জন্য তৃতীয় পক্ষের ব্যবহার জড়িত, যা প্রজননের স্বাভাবিক নিয়মকে লঙ্ঘন করে। উপরন্তু, এটি বংশ এবং উত্তরাধিকারের সমস্যাও হতে পারে। যেখানে শিয়া মুসলমানদের সারোগেসির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। কিছু বিশিষ্ট শিয়া পণ্ডিতদের মতে, সারোগেসি গ্রহণযোগ্য কারণ এতে কোনো পাপ কাজ জড়িত নয় এবং এটি পারিবারিক ভিত্তি বজায় রাখার জন্য করা হয়।]

এই ধারাবাহিকতায় 8 নভেম্বর UAE কাউন্সিল ফর ফতোয়া-এর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তৃতা করার সময়, সারা বিশ্বের 160 জনেরও বেশি আলেম, বিজ্ঞানী এবং বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিত্বের সামনে ড. মাহা তাইসির বারাকাত , সারোগেসিকে বিজ্ঞান হিসেবে গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে সারোগেট মা শিশুকে পুষ্টিকর ও জীবন ধারণকারী পরিবেশ প্রদান করে।

উপসংহার

সারোগেসি একটি জটিল এবং সংবেদনশীল বিষয়। এটি ইচ্ছুক বাবা-মা এবং সারোগেট মা উভয়ের জন্য জীবন পরিবর্তনকারী একটি প্রক্রিয়া হতে পারে। সারোগেসি গ্রহণ করার আগে সবদিক ভালোভাবে বিবেচনা করে এবং আইনি পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। সারোগেসির মাধ্যমে বহু পরিবার তাদের সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন, তাই এই প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন ব্যক্তির জীবনে অসাধারণ ভূমিকা পালন করছে।

1 thought on “সারোগেসি বলতে কি বুঝায়?”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top