প্রেম করা কি ভালো
মনে রাখতে হবে বিয়ের জন্য মেয়ে পছন্দ করা ইসলামিক আইন কানুন মেনে মেয়ের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া ভালো মন্দ যাচাই করা জায়েজ।
একজন মেয়ে অথবা ছেলে স্বভাবত তার মা বাবার কাছে সে একজন আদরের সন্তান হিসবে থাকে, মা বাবা কখনো তার সন্তানের অমঙ্গল চান না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আসল বিষয়টা হচ্ছে আমরা সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে পারি না , আর যৌবন বয়সের এক একটি ভুল সিদ্ধান্তই আমাদের জীবন ধ্বংস করে দেয়।
বিয়ের আগে প্রেম করা কি জায়েজ
প্রেম শব্দ একটা ভালো শব্দ যার অর্থ ভালোবাসা মায়া মহব্বত ইত্যাদি। বর্তমান সমাজে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রেম বলতে বিয়ের আগের অবৈধ সম্পর্ককে বুঝানো হয়। ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে অবৈধ নাজায়েজ বলা হয়েছে।
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,
‘কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে একান্তে গোপনে অবস্থান না করে। কারণ শয়তান উভয়ের কুটনি হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১৭১)
আমাদের দেশে মা বাবার পছন্দ মতো বিয়ে করা, মানে আধুনিক সমাজ মনে করে বাবা মা তার ছেলে মেয়ের স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ করেছেন।কেননা নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করাটা এখনকার যুগে স্বাধীনতা মনে করা হয়।নিজে পছন্দ করে বিয়ে করতে ইসলাম সমর্তন করে। কিন্তু সমস্যা তখন হয় যখন যুবক যুবতিরা নিজের ভালো জীবন সঙ্গি খোজার নাম করে, বিবাহ বহির্ভূত তথাকথিত প্রেম নামক অবৈধ সম্পর্কে পাপ কাজে লিপ্ত হয়। এখানে আবার আরেক দল লোক আছেন যারা বলেন বিয়ের উদ্দেশ্যে তথাকথিত প্রেমকে পবিত্র প্রেম বলে আখ্যায়িত করেন। বিয়ের ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা মনে করেন। দেখুন উদ্দেশ্য আপনার যতো ভালোই থাকুক কেনো ,ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে খারাপ কাযে লিপ্ত হইলে, খারাপ কাজ কখনো ভালো কাজে রূপান্তরিত হয় না। এটা হচ্ছে কু -যুক্তি যেমন কোরবানির উদ্দেশ্যে গরু চুরি করা।
তবে হ্যাঁ প্রেম হালাল যদি সম্পর্ক হালাল হয়। আমাদের সমাজে তথাকথিত প্রেম সম্পর্কে মানুষের কিছু ভূল ধারণা আছে, কেউ কেউ মনে করেন বিয়ের আগে নিজ থেকে পাত্র পাত্রি পছন্দ করা, শরিয়তের আইনের ভিতরে থেকে প্রয়োজনিয় কথা বলা, ভালো মন্দ দিক সম্পর্কে খোঁজ নেওয়াটাই প্রেম ,আর প্রেম বলতেই হারাম সম্পর্ক। আসলে তা নয় প্রেম ভালো জিনিস যদি তা হালাল সম্পর্কের উপড় ভিত্তি করে হয়।
প্রেম করা কি অপরাধ
একজন পুরুষ আর বেগানা নারীর মাঝে যে সম্পর্ক গরে ওঠে যেটাকে মানুষ প্রেম নামে অভিহিত করে থাকে , সেটা কত গুলু হারাম কাজ এবং শরীয়ত পরিপন্থী বিষয়ের সমষ্টি, এ ধরনের সম্পর্ক হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন বিবেকবান ব্যক্তি সন্দেহ করতে পারে না। কারণ এতে রয়েরছে বেগানা নারীর সাথে অবস্থান, বেগানা নারীর দিকে থাকানো , প্রেম অনুরাগমূলক কথা বার্তা, যেসব কথা যৌন কামনা ও চাহিদাকে উত্তেজিত করে । এ ধরণের সম্পর্কের ফলে ব্যবিচার যিনার মতো জগন্য গঠনাও ঘটতে পারে, যেমনটি বাস্তবে দেখা যায়।
প্রেমের বিয়ে ভাঙে কেন
গবেষনায় সাব্যস্ত হয়েছে যে,
যে বিয়েগুলো ছেলে এবং মেয়ের পূর্ব তথাকতিত অবৈধ প্রেমের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়েছে, সে বিয়েগুলোর অধিকাংশই ব্যর্থ পক্ষান্তরে , যে বিয়েগুলো এ ধরণের হারাম কাজের উপড় বা হারাম সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সে বিয়েগুলো সফল । যে বিয়েকে মানুষ এরেঞ্জ ম্যারেজ বা গতানুগতিক বিয়ে নামে অভিহিত করে থাকে।
ফরাসি সমাজ বিজ্ঞানী সৌল জন ডন এর মাঠ পর্যায়ের একটি গবেষণার ফলাফল হচ্ছে । যে বিয়ের পাত্র পাত্রী বিয়ের আগে তথাকতিত অবৈধ প্রেমে পরেনি, এমনি বিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি সফলতা বাস্তবায়ন করছে। অপর এক সমাজ বিগজ্ঞানী আব্দুল বারী কর্তৃক ১৫০০ টি পরিবারের ওপর পরিচালিত গবেষণার ফলাফল হচ্ছে ৭৫% এর বেশি অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে ঘটিত বিয়ে, তালাকের মাধমে পরিসমাপ্তি হয়েছে।
প্রেমের বিয়ে টিকে না কেন
প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন সময় ছেলে মেয়ে দুজনই নিজেকে একে অপরের সামনে ভালো হিসেবে উপস্থাপন করার আপ্রাণ চেষ্টায় থাকে। এক প্রকার মিথ্যা অভিনয় করে যায়। এই মিথ্যা অভিনয় থেকে শুরু হয় একজনের প্রতি আরেক জনের আগাদ চাহিদা , একজনের প্রতি আরেক জনের আসক্তি । একে অপরের মাঝে এমন মনোভাব আসে, যে তারা একজন আরেক জনকে ছাড়া বাছবে না , পৃথীবির সব কিছু ছাড়তে পারবে একে অপরের জন্য। তাদের কাছে মনে হয় তারা একে অপরের জন্য পার্ফেক্ট জীবন সঙ্গী পেয়ে গেছে । কিন্তু বিয়ের পর এক ছাদের নিচে শুরু হয় বাস্তব জীবন । যেখানে আর মিথ্যা অভিনয় থাকে না , তখন প্রকাশ পায় একে অপরের আসল চেহারা। শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়ন , প্রেম করে বিয়ে করার ফলে অধিকাংশ সময় দুই পরিবারে দুরত্ব থেকে যায়।
প্রেমের বিয়ে অনেক সময় টিকে না থাকার কারণ বিভিন্ন সামাজিক, মানসিক এবং ব্যক্তিগত বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যদিও প্রেমের বিয়ে সফল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে, তবে কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে যা এ ধরনের বিয়েকে ঝুঁকির মুখে ফেলে।
১. বাস্তবতা বনাম প্রত্যাশার সংঘাত:
প্রেমের সময় মানুষ সাধারণত নিজেদের সেরা দিকটি প্রকাশ করে। কিন্তু বিয়ের পর দৈনন্দিন জীবনের বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ এবং অভ্যাসগত ত্রুটিগুলো প্রকাশ পায়।
- প্রত্যাশা পূরণ না হলে হতাশা তৈরি হয়।
- একে অপরের আচরণ মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়।
২. পারিবারিক সমর্থনের অভাব:
প্রেমের বিয়ে অনেক সময় পরিবারের অনুমতি ছাড়া হয়। এতে:
- দম্পতি পরিবার থেকে মানসিক বা আর্থিক সহায়তা পায় না।
- পারিবারিক চাপ সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে।
৩. অপর্যাপ্ত পরিপক্কতা:
প্রেমের বিয়েতে অনেক সময় দম্পতিরা আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নেয়।
- বয়স কম থাকলে জীবন সম্পর্কে বাস্তব ধারণার অভাব থাকে।
- দায়িত্বশীল হওয়ার মানসিক প্রস্তুতি না থাকলে সমস্যা দেখা দেয়।
৪. আর্থিক ও সামাজিক চাপ:
প্রেমের সময় আর্থিক দিকগুলো গুরুত্ব পায় না। তবে বিয়ের পর এটি বড় একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
- আর্থিক সমস্যা থেকে ঝগড়া হতে পারে।
- সামাজিক বৈষম্য বা পার্থক্য সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. পরিবারের চাপে বিচ্ছিন্নতা:
- অনেক সময় পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক টানাপোড়েনের কারণে দম্পতির মধ্যেও সমস্যা তৈরি হয়।
- বিয়ে টিকিয়ে রাখতে পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।
৬. একঘেয়েমি:
প্রেমের সময় সম্পর্কটি নতুন এবং উত্তেজনাপূর্ণ থাকে।
- বিয়ের পর যদি দম্পতি সম্পর্কের প্রতি নতুনত্ব আনার চেষ্টা না করে, তবে একঘেয়েমি তৈরি হয়।
- এটি দূরত্ব বা বিচ্ছিন্নতার কারণ হতে পারে।
৭. কমিউনিকেশন সমস্যাঃ
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পর্যাপ্ত যোগাযোগ বা বোঝাপড়ার অভাব থাকলে:
- ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝি বড় আকার ধারণ করে।
- এটি দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ক নষ্ট করে।
৮. পরিবার গঠন বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অমিল:
দুজনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বা লক্ষ্য ভিন্ন হলে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়।
- সন্তান নেয়ার বিষয়ে মতভেদ।
- ক্যারিয়ার বা স্থান পরিবর্তনের মতো বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব।
৯. সমঝোতার অভাব:
বিয়ের পর অনেক বিষয় নিয়ে সমঝোতা করতে হয়।
- যদি এক পক্ষ সমঝোতার চেষ্টা না করে, তবে সমস্যা বাড়ে।
- একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার অভাব সম্পর্ককে দুর্বল করে।
১০. পরিবার বা বন্ধুদের হস্তক্ষেপ:
- যদি তৃতীয় পক্ষ সম্পর্কের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে, তবে সমস্যা জটিল হতে পারে।
- পরিবার বা বন্ধুদের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ সম্পর্কের স্থায়িত্ব হ্রাস করে।
পরামর্শ:
প্রেমের বিয়ে টেকানোর জন্য বোঝাপড়া, সমঝোতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং দায়িত্বশীল আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিয়েকে সফল করতে আবেগের পাশাপাশি বাস্তবতার বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়।
গোপনে বিয়ে করা কি জায়েজ
ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন যা নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন এবং শর্তের মধ্যে সম্পন্ন হয়। গোপন বিয়ে বা এমন বিয়ে যা পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব বা সমাজের লোকজন জানে না, তা ইসলামিক শরিয়তের দৃষ্টিতে বেশ কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ না করলে জায়েজ নয়।
গোপন বিয়ে সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি:
- গোপন বিয়ের সমস্যা:
ইসলামে বিয়েকে একটি প্রকাশ্য ইবাদত হিসেবে দেখা হয়। বিয়ের বিষয়টি সমাজের মধ্যে জানানো গুরুত্বপূর্ণ, যাতে এটি আইনত এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয় এবং ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করে। - মহর ও সাক্ষী আবশ্যক:
বিয়েতে মহর (নারীর জন্য প্রাপ্য উপহার) এবং কমপক্ষে দুইজন সাক্ষী থাকা বাধ্যতামূলক। গোপন বিয়েতে যদি সাক্ষী না থাকে বা মহর প্রদান না করা হয়, তাহলে সেই বিয়ে বৈধ হবে না। - ওয়ালির অনুমতি:
যদি কোনো নারী তার পরিবারের (বিশেষত অভিভাবক বা ওয়ালির) অনুমতি ছাড়া বিয়ে করেন, তবে এটি ইসলামিক দৃষ্টিতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। বিশেষত হানাফি মাজহাবে প্রাপ্তবয়স্ক নারীর স্বাধীন বিয়ের অধিকার আছে, তবে পরিবারের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। - গোপন বিয়ের ফলাফল:
গোপন বিয়ে প্রায়ই পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। যদি বিষয়টি পরে প্রকাশ পায়, এটি পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও আস্থার সংকটের কারণ হতে পারে।
ইসলামে বিয়েকে প্রকাশ্য করার গুরুত্ব:
- ইসলামে ইজহার আন-নিকা (বিয়ে প্রকাশ করা) সুন্নত। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন: “এই বিয়ে ঘোষণা কর এবং দফ বাজাও।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৯৫)
- বিয়ে ঘোষণা করার উদ্দেশ্য হলো সমাজকে বিষয়টি জানানো এবং সম্ভাব্য সন্দেহ বা গুজব এড়ানো।
বিশেষ পরিস্থিতি:
কিছু ক্ষেত্রে যদি নিরাপত্তা বা বৈধ কোনো কারণে বিয়ে গোপন রাখা হয়, তবে তা অবশ্যই সাক্ষী এবং শরিয়তের অন্যান্য শর্ত পূরণ করে হতে হবে। পরে যখন পরিস্থিতি অনুকূল হবে, তখন তা প্রকাশ করার চেষ্টা করতে হবে।
সিদ্ধান্ত:
গোপন বিয়ে শরিয়তের শর্ত পূরণ ছাড়া জায়েজ নয়। বিয়েকে প্রকাশ্যে, সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যভাবে এবং ইসলামের বিধি-বিধান অনুসারে সম্পন্ন করা উত্তম।
go ahead. best of luck.
thank you so much
পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার আপনাকে।