সান্ডা খাওয়া কি হালাল

সান্ডা বা দব কী?

সাণ্ডা(“ضب”), যার বৈজ্ঞানিক নাম Uromastyx, এক ধরনের মরুভূমি সরীসৃপ। এটি দেখতে টিকটিকির মত যার শরীর মোটা পুরো চামড়া ও লেজ খসখসে। সাণ্ডা(ضب) মরুভূমিতে বাস করে সাধারণত বেদুইন ও গ্রামীণ লোকেরা বেশি খেতে দেখা যায়।ইসলামে বিভিন্ন প্রাণী খাওয়া হালাল না হারাম তা নিয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। সাণ্ডা খাওয়ার বিষয়টি ইসলামী ফিকহ এবং হাদিস অনুযায়ী কীভাবে দেখা হয়, সান্ডা খাওয়া কী হালাল? তা আমরা এখানে বিশদভাবে আলোচনা করব।

সান্ডা বা দবের বৈশিষ্ট্য

সান্ডা সাধারণত মরুভূমি অঞ্চলে পাওয়া যায় এবং এটি বংশবিস্তার করে ডিমের মাধ্যমে। প্রাপ্তবয়স্ক সাণ্ডার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এটি সাধারণত গাছের লতাপাতা, ঘাস ও শস্য খায়।মরুভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকে।, যা সাণ্ডা নামক প্রাণীকে অন্যান্য সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী থেকে আলাদা করে তোলে।

সান্ডা খাওয়া কি হালাল

সান্ডা খাওয়ার বিষয়ে হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গি

সাণ্ডা খাওয়া নিয়ে হাদিসে বিভিন্ন আলোচনা পাওয়া যায়, যা থেকে বোঝা যায় এটি খাওয়া নিষিদ্ধ নয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে এটি খাননি। এর কারণ হিসেবে তার ব্যক্তিগত অপছন্দ এবং খেতে অভ্যস্ত না হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।

রাসুলুল্লাহ ( সাঃ) এর সাণ্ডা খাওয়ার ঘটনা

হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত,

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কাছে একবার এক লোক সাণ্ডা হাদিয়া দেয়। তিনি তা খাননি কিন্তু এটিকে হারামও ঘোষণা করেননি।” ( তিরমিযি)

হযরত ইবনে ওমর (রা) বর্ণনা করেন,

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সাণ্ডা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে বললেন, ‘আমি এটি খাই না, তবে এটিকে হারামও বলি না

ইবনে আব্বাস (রা) উল্লেখ করেছেন

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দস্তরখানায় (খাবার খাওয়ার স্থান) এ সাণ্ডা পরিবেশিত হয়েছিলো। তিনি ঘৃণার কারণে তা খাননি, কিন্তু অন্য সাহাবীরা তা খেয়েছিলেন।”

উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে বুঝা যায় যে,সান্ডা খাওয়া হালাল, তবে এটি অপছন্দনীয় মনে করায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে তা এড়িয়ে গেছেন।

ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী সান্ডা খাওয়া

ফিকহের বিভিন্ন মাজহাব সাণ্ডা খাওয়ার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে।

  1. শাফেয়ী ও মালিকি মাজব: এই মাজহাব অনুযায়ী, সাণ্ডা খাওয়া হালাল। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) নিজে সাণ্ডা খাওয়া হারাম ঘোষণা করেননি।
  2. হানাফি মাজহাব: হানাফি আলেমগণ এটিকে মাকরূহ বলেছেন। তবে মাকরূহ হওয়া বলেই তা হারাম নয়। এটি না খাওয়াই উত্তম বলে মনে করেন তারা।
  3. হাম্বলি মাজহাব: এই মাজহাবেও সাণ্ডা খাওয়াকে বৈধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সান্ডা আর গুইসাপ কি এক

অনেকেই মনে করেন হাদিসে বর্ণিত সান্ডা এবং বাংলাদেশে পাওয়া গুইসাপ একই প্রাণী তবে এ ধারণা সঠিক নয়।

সান্ডা বা দব
সান্ডা বা দব

সাণ্ডা (Uromastyx):

  • মরুভূমিতে বাস করে।
  • নিরামিষভোজী।
  • শরীর এবং লেজ খসখসে
  • এটি বিষাক্ত নয় এবং সাপ জাতীয় প্রাণী নয়।

গুইসাপ (Monitor lizard):

গুইসাপ
গুইসাপ
  • উভচর প্রাণী।
  • মাংসাশী এবং মৃত প্রাণী খায়।
  • দেখতে কিছুটা সাণ্ডার মত হলেও এটি কুমিরের মতো চলাফেরা এবং শিকার করে।
  • গুইসাপ পরিবেশের জন্য উপকারী, তবে এটি বিষাক্তও হতে পারে। ইসলামে এটি খাওয়া হারাম।

সাণ্ডা এবং গুইসাপ দেখতে কিছুটা মিল থাকলেও বাসস্থান, খাদ্যাভ্যাস এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্যে এরা সম্পূর্ণ আলাদা। তাই সাণ্ডা খাওয়া হালাল, কিন্তু গুইসাপ খাওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ।

সান্ডা খাওয়া হালাল হওয়ার কারণ

১. রাসূলুল্লাহ ( সা)-এর অনুমতি : রাসূলুল্লাহ (সা) সাণ্ডাকে হারাম ঘোষণা করেননি এবং সাহাবিরা তার সামনে এটি খেয়েছেন।

২.অধিকাংশ আলেমদের অভিমত : ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালিক এবং অন্যান্য ফকিহদের মতে সাণ্ডা খাওয়া হালাল।

৩. বিষাক্ত নয়: সাণ্ডা কোনো বিষাক্ত প্রাণী নয়। এটি নিরামিষভোজী এবং পরিবেশের ক্ষতি করে না।

সান্ডা খাওয়ার উপকারিতা

বিশেষ করে এটি মরুভূমি অঞ্চলে সাধারণ খাদ্য হওয়ায় স্থানীয় লোকেদের কাছে এটি পুষ্টিকর একটি খাদ্য হিসেবে পরিচিত। তারা মনে করেন সাণ্ডা খেলে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

সাণ্ডা
সাণ্ডা বা দব

সাণ্ডার মাংস খেতে অনেকটা শক্ত মাছের মাংসের মতো স্বাধ লাগে। সান্ডার হাড্ডী মাছের কাটার মত শক্ত এবং খেতেও প্রায় মাছের মাংসের মত মনে হয়।

১. প্রোটিনের উৎস : সাণ্ডার মাংস প্রোটিন সমৃদ্ধ যা শরীরের মাংসপেশি মজবুত করে।

২. কম চর্বিযুক্ত : সাণ্ডার মাংসে চর্বির পরিমাণ কম, যা স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের জন্য উপযোগী।

৩. মরুভূমি অঞ্চলের উপযোগী খাদ্য : এটি সহজলভ্য এবং স্থানীয় পরিবেশে সহজে রান্না করা যায়। তবে বর্তমান সময়ে সাণ্ডা আগের মতো দেখা যায় না বা সহজলভ্য নয়।

৪.শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক: মাংসে থাকা পুষ্টি উপাদান ক্লান্তি দূর করবশক্তি যোগায়।

তবে এসব উপকারিতা নির্ভর করে এটি সঠিকভাবে প্রস্তুত এবং রান্না করার উপর।

সাণ্ডা
সাণ্ডার বিরিয়ানি

সান্ডার তেলের উপকারিতা:

সান্ডার তেল প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। বিশেষ করে লোকজ চিকিৎসায় এটি জনপ্রিয়। সংক্ষেপে সান্ডার তেলের কিছু উপকারিতা:

১. শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে : সান্ডার তেল শক্তিবর্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে এটি যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়

২. ত্বকের রোগ নিরাময়ে : ত্বকের ক্ষত ও সংক্রমণ সারাতে সান্ডার তেল কার্যকরী বলে মনে করা হয়।

৩. গিটের ব্যাথায়: গেটেবাত বা অন্যান্য অস্থিসংক্রান্ত ব্যথায় সান্ডার তেল মালিশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

৪. প্রদাহ দূর করতে : সান্ডার তেলের এন্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য প্রদাহ বা ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।

৫. চুলের যত্নে : লোকজ চিকিৎসায় সান্ডার তেল চুল ঘন এবং মজবুত করতে ব্যবহৃত হয়।

সতর্কতা : সান্ডার তেল ব্যবহারের আগে বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ

যদি কেউ সান্ডা খেতে চায়

যেহেতু এটি হালাল, তাই যদি কেউ এটি খেতে চায়। তবে ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী তা প্রস্তুত করতে হবে। সাণ্ডা জবাই করতে হলে সাধারণ নিয়মে আল্লাহর নাম নিয়ে তা জবাই করতে হবে।

উপসংহার

এটি ইসলামের খাদ্যবিধি এবং নবীজির সুন্নাহর প্রতি সম্মান দেখিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে না খাওয়ারও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এটি খাওয়া কিংবা এড়িয়ে যাওয়া উভয়টাই ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top