পারিবারিক অশান্তি বা ঝগড়াঝাঁটি জীবনের একটি স্বাভাবিক সমস্যা হলেও তার সামলানো না গেলে সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। পরিবারের শান্তি বজায় রাখা এবং সবার মধ্যে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এই আর্টিকেল এ আলোচনা করা হবে, পারিবারিক যোগ রাজাকের কারণ, সেই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় এবং পরিবার আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার উপায়।।
পারিবারিক ঝগড়াঝাঁটির কারণ
পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মত পার্থক্য এবং ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঝগড়াঝাঁটি হতে পারে, কয়েকটি কারণ নিচে দেওয়া হ্লো।
- অর্থনৈতিক সংকট : অর্থনৈতিক সমস্যা অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিক উত্তেজনা ও ঝগড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় । খরচের উপর নিয়ন্ত্রণ, আয় বৃদ্ধি বা সমমান দায়িত্বশীলতার অভাবে দাম্পত্য এবং অন্যান্য সম্পর্কের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়।
- যোগাযোগের অভাব : অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সঠিকভাবে কথা না বলার কারণে ভুল বোঝবুঝি সৃষ্টি হয়। কথা পরিষ্কার ভাবে বলা না হলে ঝগড়া বাধতে পারে।
- সম্পর্কের সম্মান এবং বিশ্বাসের অভাব : পারিবারিক সম্পর্ক গুলো সম্মান ও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি। কখনও কখনও সম্মান বা বিশ্বাসের অভাবে সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়ন দেখা দেয়
- পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সময়ের অভাব : আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় পরিবারে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার কারণে দূরত্ব তৈরি হয়। এই দূরত্বের ফলে পরিবারের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
- আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের হস্তক্ষেপ : কখনো কখনো আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীর নাক গলানোর কারণে পারিবারিক অশান্তি বৃদ্ধি পায়। প্রতিবেশীদের কুমন্ত্রণা এবং উস্কানিমূলক কথায় পরিবারের ঝগড়াঝাঁটি বৃদ্ধি পায়।
পারিবারিক অশান্তি থেকে মুক্তির উপায়
পরিবারের শান্তি বজায় রাখতে এবং ঝগড়াঝাঁটি এড়াতে কয়েকটি কার্যকর উপায় নিচে দেওয়া হলো :
- খোলামেলা এবং আন্তরিক যোগাযোগ বজায় রাখা : পরিবারের সদস্যদের মধ্যে খোলামেলা ও আন্তরিকভাবে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একে অপরকে ভালোভাবে বুঝা এবং কথাগুলো ধৈর্যের সাথে শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- সম্মান ও ভালোবাসা বজায় রাখা : একে অপরের মতামত, পছন্দ-অপছন্দ এবং সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখানোর চেষ্টা করুন। সম্পর্কের প্রতি সম্মান দেখালে ঝগড়া কবে আসবে।
- সময়মতো সমস্যার সমাধান : সমস্যা সৃষ্টি হলে তা দেরি না করে দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করুন। এড়িয়ে না গিয়ে তা নিয়ে আলোচনা করলে ঝগড়াঝাটি অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব।
- পরিবারের সকলের সাথে সময় কাটানো : প্রতিদিন পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু সময় বের করুন। একসাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয় এবং ঝগড়াঝাটি কম হয়।
- অর্থনৈতিক দায়িত্ব ভাগ করে নিন :অর্থনৈতিক দায়িত্ব সমানভাবে ভাগ করে নিলে চাপ কমে যায় এবং সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা কম থাকে। বাজেট পরিকল্পনা ও সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে সবাইকে যুক্ত করা যেতে পারে।
- ধৈর্য ও সহনশীলতা বজায় রাখা : ধৈর্য এবং সহনশীলতা সম্পর্কের ভিত্তিকে শক্তিশালী করে।তাই কঠিন পরিস্থিতিতেও ধৈর্য বজায় রাখা উচিত।
- প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা : আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে হলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহযোগিতামূলক হতে হবে। অন্যের সমস্যায় সহায়তা করলে নিজের সমস্যায়ও সহযোগিতা পাওয়া সহজ হয়।
- সঠিকভাবে বিরোধ সামলানোর কৌশল : ঝগড়া বাঁধলে বিষয়টি শান্তভাবে সামলানোর চেষ্টা করুন। রাগের বশে কথা না বলে কিছু সময় নিয়ে ভাবুন, তারপর কথা বলুন এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সহজ হতে পারে।
ভাই বোন, স্বামী-স্ত্রী, মা-বাবা ও সন্তানের ঝগড়াঝাঁটি এড়ানোর উপায়
- ভাই বোনের ঝগড়াঝাঁটি: তাদেরকে ছোট থেকেই সহযোগিতা ও শেয়ারিং শেখাতে হবে। একে অপরের প্রতি দয়া ও সহানুভূতির মনোভাব গড়ে তুলতে হবে
- স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া: স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের মতামত ও সিদ্ধান্তে পরস্পরকে যুক্ত করা উচিত।
- মা বাবা ও সন্তানদের ঝগড়াঝাটি: সন্তানের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন এবং তাদের সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনুন। বার নির্দেশ মেনে চলার জন্য সন্তানকে উৎসাহিত করতে হবে।
সম্পর্ক বজায় রাখতে উপদেশ
- পরস্পরের মতামতকে সম্মান দিন: মতভেদ থাকা সত্ত্বেও পরস্পরের মতামতকে সম্মান করুন এবং শোনার চেষ্টা করুন।
- সহযোগিতামূলক আচরণ: পরিবার ও প্রতিবেশীদের সমস্যা সমাধানে সহযোগিতামূলক আচরণ করুন।
- বিনম্র এবং নম্রতা বজায় রাখা: নিজের কথায় এবং আচরণে নম্রতা বজায় রাখলে সম্পর্কগুলো মধুর হয়।
- ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা: পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষায় উৎসাহিত করুন।
- প্রয়োজনীয় অসহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদর্শন: আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের প্রয়োজনের সময় পাশে থাকুন। এতে গভীরতা বাড়বে।
উপসংহার
পারিবারিক অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে ধৈর্য, সহনশীলতা ভালোবাসা এবং পারস্পারিক সম্মানের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সব সমস্যার মূল সমাধান হলো সঠিকভাবে কথা বলা এবং বোঝাপড়া। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ভালোবাসা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে পরিবার ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠন সম্ভব।