শকুন বিলুপ্তির কারণ ও পরিবেশগত প্রভাব

Spread the love
শকুন বিলুপ্তির কারণ: বিষাক্ত খাদ্য, বন উজাড় এবং বাসস্থান সংকটের প্রতীকী চিত্র।

শকুন একসময় প্রকৃতির অন্যতম পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে পরিচিত ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি বিলুপ্তির পথে। কীভাবে শকুন বিলুপ্ত হচ্ছে এবং এর ফলে পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়ছে, তা নিয়েই এই আলোচনা।


১. শকুন: প্রকৃতির পরিচ্ছন্ন কর্মী

🔹 শকুন: কী ধরনের পাখি?

শকুন হলো মাংসাশী শিকারী পাখি, যা মৃত প্রাণীর দেহ খেয়ে প্রকৃতিকে পরিচ্ছন্ন রাখে। এরা সাধারণত দ্রুত উড়তে পারে না, তবে অনেক উঁচুতে ভেসে থাকতে পারে এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির মাধ্যমে শিকার খুঁজে নেয়।

🔹 শকুনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য

শকুনের পাখার বিস্তৃতি অনেক বড়, যা ওড়ার সময় ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এদের ঠোঁট ও নখর ধারালো হলেও হিংস্র নয়, কারণ তারা মৃত প্রাণীই খেয়ে বেঁচে থাকে।

👉 পাঠা ও খাসির পার্থক্য, খাসি করা কি জায়েজ

🔹 রাজা শকুনের বৈশিষ্ট্য।

রাজা শকুন সাধারণ শকুনের তুলনায় বড় এবং দেখতে আরও রঙিন ও আকর্ষণীয়। এটি প্রধানত দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় দেখা যায় এবং অন্যান্য শকুনের তুলনায় তুলনামূলক শক্তিশালী।


২. শকুনের জীবনচক্র ও আবাসস্থল

🔹 শকুনের শারীরিক বিবরণ

এদের দেহ সাধারণত বিশাল আকৃতির হয়, পালক কালো বা বাদামি রঙের, মাথা অনেক সময় পালকবিহীন থাকে।

🔹 শকুনের আবাসস্থল ?

শকুন সাধারণত উঁচু গাছ, পাহাড় বা খোলা তৃণভূমির কাছাকাছি বসবাস করে, যেখানে তারা সহজেই মৃত প্রাণী খুঁজে পেতে পারে।

🔹 শকুন কত বছর বাঁচে ?

বন্য পরিবেশে শকুন সাধারণত ২০-৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, তবে নিরাপদ আবাসস্থলে এদের আয়ুষ্কাল ৪০ বছর পর্যন্ত হতে পারে।


৩. শকুনের খাদ্যাভ্যাস ও পরিবেশগত ভূমিকা

🔹 রাজা শকুন কী খায়?

এরা মূলত মৃত প্রাণীর মাংস খায়, তবে মাঝে মাঝে ছোট প্রাণীও শিকার করতে পারে।

🔹 শকুন কীভাবে মানুষের উপকার করে?

শকুন পরিবেশের প্রাকৃতিক পরিচ্ছন্নতাকারী। তারা দ্রুত মৃত প্রাণীর দেহ ভক্ষণ করে, যা বিভিন্ন রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়া রোধ করে।

🔹 পরিবেশের জন্য শকুনের গুরুত্ব

শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে মৃত প্রাণী পচে গিয়ে বায়ু ও জল দূষিত হচ্ছে এবং এতে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।


৪. শকুন বিলুপ্তির কারণ ও বর্তমান পরিস্থিতি

শকুন একসময় প্রকৃতির এক অনন্য পরিশোধক হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু দিন দিন এরা প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এই বিলুপ্তির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যা পরিবেশের ভারসাম্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ, বিলুপ্তির সময়কাল এবং এদের সংরক্ষণে কী করা যেতে পারে।

শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ এবং বিলুপ্তির হুমকি"

৪.১ শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ

একসময় বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে প্রচুর শকুন দেখা যেত। তবে কয়েক দশকের ব্যবধানে এই সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—

ডাইক্লোফেনাক ওষুধের প্রভাব: গবাদি পশুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত এই ব্যথানাশক ওষুধ শকুনের জন্য মারাত্মক বিষাক্ত। শকুন যখন মৃত গরু-মহিষের মাংস খায়, তখন এই ওষুধ শকুনের শরীরে প্রবেশ করে এবং কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুর কারণ হয়। সুত্র উইকিপিডিয়া

খাদ্যের অভাব: আগের মতো মাঠে-ময়দানে বা জঙ্গলে মৃত পশুর দেখা পাওয়া এখন অনেক কঠিন। পশুদের কৃত্রিম উপায়ে মাটিচাপা দেওয়া বা দূরে সরিয়ে ফেলার ফলে শকুন খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে।

বন উজাড় ও বাসস্থান সংকট: শহর ও গ্রামে বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে শকুনের প্রজনন ও নিরাপদ আশ্রয়ের জায়গা সংকুচিত হয়েছে।

বিষ প্রয়োগ: অনেকে মৃত প্রাণীর মাংসে বিষ প্রয়োগ করে শেয়াল বা অন্যান্য প্রাণী মারার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে শকুনও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়।

শিকার ও কুসংস্কার: কিছু অঞ্চলে শকুনকে কুসংস্কার বা লোকজ বিশ্বাসের কারণে হত্যা করা হয়। এছাড়া, তাদের পাখা ও দেহের কিছু অংশ অবৈধভাবে বিক্রি হয়, যা বিলুপ্তির আরেকটি কারণ।

৪.২ শকুন কত বছর আগে বিলুপ্ত হতে শুরু করে?

বাংলাদেশে ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত প্রচুর শকুন দেখা যেত। কিন্তু ২০০০ সালের পর থেকে এই সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। গবেষকদের মতে, ২০০০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ৯০% শকুন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিশেষ করে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সরকার ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

বর্তমানে বাংলাদেশে কিছু নির্দিষ্ট অভয়ারণ্যে মাত্র কয়েকশ’ শকুন টিকে আছে, যা ২০ বছর আগের তুলনায় নগণ্য।

৪.৩ শকুন সংরক্ষণে করণীয়

শকুন সংরক্ষণে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে—

শকুন সংরক্ষণ এবং প্রকৃতিতে শকুনের ভূমিকা

নিরাপদ খাবার সরবরাহ: শকুনের জন্য ‘শকুন রেস্তোরাঁ’ বা নিরাপদ খাবার কেন্দ্র তৈরি করা উচিত, যেখানে বিষমুক্ত মৃত পশুর মাংস সরবরাহ করা হবে।

ডাইক্লোফেনাকের বিকল্প ওষুধ ব্যবহার: সরকার ইতোমধ্যে মেলোক্সিক্যাম নামক বিকল্প ওষুধের অনুমোদন দিয়েছে, যা শকুনের জন্য ক্ষতিকর নয়। এটি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে।

বন ও আশ্রয়স্থল সংরক্ষণ: শকুনের বাসস্থান রক্ষার জন্য সংরক্ষিত বনাঞ্চল তৈরি করতে হবে এবং গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি: গ্রাম ও শহরের মানুষকে শকুনের উপকারিতা সম্পর্কে বোঝানো দরকার, যাতে তারা অকারণে শকুন হত্যা না করে এবং এদের রক্ষায় উদ্যোগী হয়।

আইন প্রয়োগ: যারা শকুন হত্যা বা শিকার করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

উপসংহার

শকুন প্রকৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা মৃত প্রাণীদের খেয়ে পরিবেশ পরিষ্কার রাখে। তবে মানুষের অবহেলা ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তারা আজ বিলুপ্তির পথে। সঠিক সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই মূল্যবান পাখিটিকে রক্ষা করতে পারি এবং প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি।

👉আরো পড়ুন শাপলাপাতা মাছ খাওয়া কি হালাল

কোন ভুল তথ্য থেকে থাকলে আমাদের অবগত করুন এবং আপনার পরামর্শ বা মতামত জানাতে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন।

Scroll to Top