ইসলাম ধর্মের খাদ্যসংক্রান্ত বিধি-বিধান অত্যন্ত সুস্পষ্ট। যা হালাল (বৈধ) এবং হারাম (নিষিদ্ধ), তা নিয়ে ইসলামিক ফিকহে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। এই প্রবন্ধে স্কুইড, অক্টোপাস, কাকড়া, কুইচ্চা, ব্যাঙ, শামুক, এবং ঝিনুক খাওয়ার ইসলামী বিধান নিয়ে আলোচনা করা হবে।
কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গি
আল্লাহ বলেন,
“তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার এবং তা থেকে আহার করা হালাল করা হয়েছে।” (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৯৬)
কিন্তু সমুদ্রের প্রতিটি প্রাণী খাওয়া হালাল কিনা তা নিয়ে চার মাজহাবে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এসব প্রাণী নিয়ে সিদ্ধান্ত মূলত তাদের প্রকৃতি এবং বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে।
১. স্কুইড ও অক্টোপাস খাওয়া কি হালাল :
স্কুইড ও অক্টোপাস মূলত সমুদ্রের নরমদেহী প্রাণী। এদের শরীরে কোনো হাড় বা আঁশ নেই।
- হানাফি মাজহাব: হানাফি মাজহাব মতে, শুধুমাত্র আঁশযুক্ত মাছ খাওয়া হালাল। যেহেতু স্কুইড ও অক্টোপাসের শরীরে আঁশ নেই, তাই এগুলো খাওয়া মাকরুহ বা হারাম।
- শাফেয়ি, মালিকি ও হানবলি মাজহাব: এসব মাজহাবে সকল সমুদ্রপ্রাণী হালাল বলে গণ্য। তাই স্কুইড ও অক্টোপাস খাওয়া বৈধ।
২. কাকড়া খাওয়া কি হারাম :
কাকড়া একটি জলজ প্রাণী, যা জলে ও ডাঙ্গায় উভয় স্থানে বসবাস করতে পারে।
- হানাফি মাজহাব: কাকড়া খাওয়া হালাল নয়। কারণ এটি জলজ প্রাণী হলেও এটি কিছু ক্ষেত্রে পোকা বা নাপাক প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত।
- শাফেয়ি, মালিকি ও হানবলি মাজহাব: এ মাজহাবগুলোতে কাকড়া খাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
৩. কুইচ্চা (ইল মাছ) খাওয়া কি হালাল :
কুইচ্চা বা ইল মাছ লম্বা আকৃতির এবং সম্পূর্ণ জলে বসবাসকারী প্রাণী।
- হানাফি মাজহাব: যেহেতু এটি একটি মাছ এবং এর শরীরে আঁশ নেই, তাই এটি খাওয়া মাকরুহ।
- অন্যান্য মাজহাব: অন্যান্য মাজহাবে এটিকে বৈধ বা হালাল হিসেবে গণ্য করা হয়।
৪. ব্যাঙ খাওয়া কি হারাম:
ব্যাঙ একটি উভচর প্রাণী, যা জলে ও ডাঙ্গায় বসবাস করে।
- সকল মাজহাব: ব্যাঙ খাওয়া হারাম। হাদিসে রাসুল (সা.) ব্যাঙ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। ইবনে মাজাহ হাদিসে উল্লেখ আছে: “রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যাঙ মারা নিষেধ করেছেন।” (ইবনে মাজাহ: ৩২১৮)
সুতরাং, ব্যাঙ খাওয়া ইসলামে হারাম।
৫. শামুক ও ঝিনুক খাওয়া কি হালাল:
শামুক ও ঝিনুক সমুদ্রের নরমদেহী প্রাণী, যেগুলো সাধারণত জলজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- হানাফি মাজহাব: এগুলো খাওয়া মাকরুহ। কারণ এগুলো মাছ নয় এবং কিছু পোকা বা নাপাক শ্রেণির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
- শাফেয়ি, মালিকি ও হানবলি মাজহাব: এই মাজহাবে এগুলো হালাল। কারণ এগুলো সমুদ্রের খাদ্যশৃঙ্খলার অংশ।
ইসলামী স্কলারদের মতামত:
প্রাণীগুলোর বৈধতা নিয়ে চার মাজহাবে মতপার্থক্য থাকলেও ইসলামিক জীবনাচার অনুসারে, যা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ নয়, তা খাওয়া বৈধ হতে পারে। তবে সতর্কতা অবলম্বন করে চলা উত্তম।
উপসংহার:
স্কুইড, অক্টোপাস, কাকড়া, কুইচ্চা, শামুক, এবং ঝিনুক নিয়ে মাজহাবভেদে বৈধতা এবং নিষিদ্ধতার ভিন্নতা রয়েছে। তবে ব্যাঙ খাওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে স্পষ্টতই হারাম।
মুসলিমরা স্থানীয় স্কলারদের পরামর্শ নিয়ে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। “হালাল” ও “হারাম” বিষয়ে সন্দেহ এড়াতে জানা এবং বুঝে কাজ করা সর্বদা উত্তম।